মাসুদ আলম: [২] চীফ অফ জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে জেনারেল পদে পদোন্নতি প্রদান পূর্বক নতুন সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আগামী ২৩ জুন অপরাহ্ন থেকে তার এই নিয়োগ কার্যকর হবে। তাকে আগামী ৩ বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। মঙ্গলবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে  এ তথ্য জানা গেছে। [৩] মঙ্গলবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ২৩ জুন (২০২৪) থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের (নিয়োগ, বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা) আইন, ২০১৮ অনুসারে ওই দিন অপরাহ্ণ থেকে তিন বছরের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

[৪] আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ১৯৮৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য হিসেবে ১৩তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। সামরিক জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন কোর্সে ভাল ফলাফলের ক্রমধারায় তিনি ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড ও স্টাফ কলেজ, মিরপুর থেকে সাফল্যের সঙ্গে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি জয়েন্ট সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ, যুক্তরাজ্য থেকেও গ্রাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় প্রথম শ্রেণীতে মাস্টার্স অবডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস) সম্পন্ন করেন এবং যুক্তরাজ্যস্থ কিংস কলেজ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে মাস্টার্স অব আর্টস ইন ডিফেন্স স্টাডিজ ডিগ্রী অর্জনকরেন। 

[৫] তার সুদীর্ঘ ৩৯ বছরের বর্ণাঢ্য সামরিক জীবন কমান্ড, স্টাফ ও প্রশিক্ষকের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। তিনি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ থেকে ৮ জুন ২০১০ পর্যন্ত ১৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর উপ-অধিনায়ক ও অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহ দমনে নিষ্ঠা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২৭ জুলাই ২০১১ থেকে ১১ নভে¤¦র ২০১৩ পর্যন্ত দুই বছরেরও বেশি সময় ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জিওসি হিসেবে ২ এপ্রিল ২০১৪ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত তিন বছর নবম পদাতিক ডিভিশন কমান্ড করেন। এরিয়া কমান্ডার, সাভার এরিয়া ও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নবম পদাতিক ডিভিশন হিসেবে তিনি টানা তিন বছর অত্যন্ত সফলভাবে বিজয় দিবস প্যারেড- ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ এর প্যারেড কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করেন। এই বিরল কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ""সেনাগৌরব পদক'' (এসজিপি) এ ভূষিত হন। 

[৬] এরিয়া কমান্ডার সাভার এরিয়া ও জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) নবম পদাতিক ডিভিশন হিসেবে ওয়াকার-উজ-জামান টানা তিন বছর অত্যন্ত সফলভাবে বিজয় দিবস প্যারেড ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬-এর প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। বিরল এই কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘সেনাগৌরব পদক’ (এসজিপি)-এ ভূষিত হন।

[৭] স্টাফ হিসেবে ওয়াকার-উজ-জামান পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত একটি ব্রিগেড, স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস (এসআইএন্ডটি) এবং সেনাসদরে বিভিন্ন পদবি ও নিয়োগে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে জেসিও এনসিও একাডেমি (জেএনএ), স্কুল অব ইনফ্যান্ট্রি অ্যান্ড ট্যাকটিকস ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অ্যান্ড ট্রেনিংয়ে (বিপসট) অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে সব পদবির দেশি-বিদেশি সেনাসদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন।

[৮]  সেনাসদর সামরিক সচিবের শাখায় তিনি সহকারী সামরিক সচিব, উপ-সামরিক সচিব এবং সামরিক সচিব (এমএস) হিসেবে বিভিন্ন মেয়াদে দীর্ঘদিন কর্তব্যরত ছিলেন। সেনাসদর, জিএস শাখার চীফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও-এএফডি) হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে কর্মরত ছিলেন।

[৯] লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতিসংঘের ব্যানারে মিলিটারি অবজারভার হিসেবে অ্যাঙ্গোলা এবং সিনিয়র অপারেশন অফিসার হিসেবে লাইবেরিয়াতে দায়িত্ব পালন করেন। সেনাবাহিনীতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি ‘অসামান্য সেবা পদক’ (ওএসপি)-এ ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে দেশ-বিদেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।

[১০] ব্যক্তিগত জীবনে ওয়াকার-উজ-জামান ও সারাহনাজ কমলিকা জামান দম্পতি দুই কন্যাসন্তানের (সামিহা রাইসা জামান ও শাইরা ইবনাত জামান) বাবা-মা। তিনি একজন সজ্জন, ক্রীড়ামোদি ও প্রাণবন্ত অফিসার হিসেবে সর্বমহলে সুপরিচিত। সম্পাদনা: ইকবাল খান